

প্রবন্ধ
সরকারি চাকরির বিধানঃ ৩য় পর্ব
১৫ মে, ২০২৫
পার্লামেন্ট সদস্য, বিচারপতি পদে চাকুরি করাঃ গত পর্বে আমরা ডিফেন্স ফোর্স নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখা দরকারঃ আমাদের আলোচনার কিছু মূলনীতি আছে। গতপর্বেও মূলনীতি আলোচনা করেছি। বোঝার সুবিধার্থে আবারো এখানে বলছি। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারে। (১) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (২) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয় (৩) মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। এবার আসুন, পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যাপারে কথা। পার্লামেন্টের সদস্যগনের মুল কাজ হলো সংবিধান রক্ষা করা, সংবিধানে নীতিমালা প্রণয়ন করা। সংবিধান প্রণয়ন বা তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা কিংবা আইনকানুন, বিধিবিধান ও নীতিমালা রচনা করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং তা কার্যকরকরণে ভূমিকা রাখা। কোনো শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো তার আইনকানুন ও বিধিবিধান। ইসলামি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূল হলো, আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার। পক্ষান্তরে তাগুতি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো, এই অধিকার মানবমস্তিষ্কের জন্য সাব্যস্ত করা এবং এক ও অদ্বিতীয় উপাস্য আল্লাহ তাআলা থেকে নিরোধ করা। ইসলাম ও গণতন্ত্রের মৌলিক দ্বন্দ্ব হলো, ইসলাম শেখায়, ইলাহ হলেন একমাত্র আল্লাহ। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অপরদিকে গণতন্ত্র শেখায়, ইলাহ হলো একমাত্র জনগণ। ‘লা ইলাহা ইল্লান্নাস’ (নাঊযুবিল্লাহ)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতি শাসনব্যবস্থার অধীনে আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের চাকরি করবে, সে স্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা তার কুফর প্রমাণিত। (1) পার্লামেন্টে হাকিমিয়্যাত তথা আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার আল্লাহ তাআলাকে দেওয়া হয় না। আইনের উৎস কুরআন ও সুন্নাহকে মানা হয় না। দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিসমূহ ইসলাম থেকে গ্রহণ করা হয় না। কোনো বিধি যদি বাহ্যিকভাবে ইসলামের সঙ্গে মিলেও যায়, তা নিরেট কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া কিছু হয় না। বৈধ-অবৈধ, সিদ্ধ-নিষিদ্ধ আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শরিয়ত বিবেচনা করা হয় না। জীবনের সবক্ষেত্রে ক্ষমতাধরদের ফায়সালাই চূড়ান্ত ফায়সালা হিসেবে বিবেচিত হয়; এমনকি এর অন্যথা করা হলে তা ইসলামসম্মত হলেও তাদের বিচারে আইনত দণ্ডনীয় হিসেবে গণ্য হয়। এমনকি মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যাপারে (পারসোনাল ল') যদি ইসলামের ওপর আমল করার স্বাধীনতা থাকে, তাও মুসলমানরা আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার হিসেবে পায় না; বরং তাগুতি শাসনব্যবস্থা অনুগ্রহস্বরূপ তাদেরকে এর সুযোগ দিয়েছে বলেই তারা এই অধিকার লাভ করে। এককথায়, তাগুতি শাসনব্যবস্থায় সংবিধান, মন্ত্রণালয়, সংসদ, আদালত সবকিছুই রচিত ও পরিচালিত হয় মানবরচিত বিধান অনুসারে; শরিয়াহ নির্দেশিত নীতি অনুসারে নয়। (2) আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ আকাইদ ও আহকামের বিদ্রূপ কিংবা অস্বীকার তো এজন্যই কুফর যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বর্জন এবং তাঁদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ। সুতরাং গোটা ইসলামকে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা আর ইসলামের কোনো একটি বিষয়কে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা একই কথা! উভয় ক্ষেত্রেই একথা বাস্তব যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং ঔদ্ধত্য ও বিরুদ্ধতা প্রকাশ করেছে। ইবলীস তো কাফির মরদূদ হয়েছিল একটি হুকুমের উপর আপত্তি করেই। বিষয়টি এমনিতেও স্পষ্ট। এরপরও আল্লাহ তাআলা কুরআন হাকীমে একাধিক জায়গায় তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) এইজন্য পার্লামেন্টে যারা শরীয়াহ বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে, যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে, জেনে বুঝে শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ী বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ. ‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারাই কাফির, তারাই জালিম, তারাই ফাসিক (সুরা মায়িদাহ: ৪৭) আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা না-করার ক্ষতিই যদি এত ভয়াবহ হয়, তাহলে সেই বিধানের বিপরীত বিধান প্রণয়ন করা ও তা জারি করা কত ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণেই সেসব ব্যক্তিবর্গকেও তাগুত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যাদের কাছে অন্যরা মানবরিচত বিধান অনুসারে বিচার প্রার্থনা করে। (3) যেমন আল্লাহ বলেনঃ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। (সুরা নিসা: ৬০) তাগুত শব্দটি যদিও ব্যাপক; কিন্তু এখানে পূর্বাপর কথা থেকে স্পষ্ট যে, এর দ্বারা শয়তান বা নফস উদ্দেশ্য নয়, পাথরের মূর্তি বা জ্যোতিষিও উদ্দেশ্য নয়। কারণ, তাদের কাছে বিচার প্রার্থনা করা হয় না। এর দ্বারা সেসব মানুষ উদ্দেশ্য, যারা আল্লাহর ফায়সালা ব্যতিরেকে ভিন্ন ফায়সালা প্রদান করে। এজাতীয় ফায়সালাকে কুরআনে জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন রাব্বে কারিম বলেনঃ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ তারা কি জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা কামনা করে? অথচ বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফায়সালাকারী আর কে হতে পারে!( সুরা মায়িদাহ: ৫০ ) এটাই হলো সরকারি চাকুরির যে তিনটি পর্যায় হতে পারে, তার প্রথম পর্যায় তথা তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (4) নোটঃ (১) উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনির্দিষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে দলগতভাবে মুরতাদ বলা হয় দেশে বিধি-বিধান শরয়ী বিধানের বিপরীতে প্রণয়নের কারণে। এরমানে এটা নয় যেঃ এখানে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির হয়ে গিয়েছে। দলগতভাবে মুরতাদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ এই দলটি কুফুরি কাজ করেছে, সবাই জড়িত ছিলো। যেমনঃ কোথাও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে ঘটনাস্থলের সবাইকে প্রাথমিক আসামী বলে মামলা করা হয়, দলগতভাবে সবাই আসামী, কিন্তু সেখানে নিরাপরাধ মানুষ অনেকেই আছে। যার কারণে এবার মুল আসামী সাব্যস্ত করতে যেয়ে যাচাই বাছাই শুরু করা হয়। তাকফিরে আম বা দলগত তাকফির বা কাফের এটাকে বলে। তাই ব্যাপকভাবে মুরতাদ বলা হচ্ছে দলগত বিবেচনায়। কিন্তু কখনো কখনো সেই দলে কোন নিরুপায় মুমিন, বা বাধ্যগত মুমিন থাকতে পারে, যে বাধ্য হয়েছে, অথবা যে মনেপ্রাণে কুফুরি বিধান প্রণয়নে বিশ্বাসী নয়। তাহলে এমন ব্যক্তি কাফির হবে না, মুরতাদ হবে না। এই পয়েন্ট বোঝা খুবই জরুরী। পার্লামেন্টের কোন সদস্যকে দেখলেই সাথে সাথে তাকে মুরতাদ বা কাফির বলাটা সুস্পষ্ট ভুল হবে। কারণ এটি তখন তাকফিরে মুআইয়ান তথা ব্যক্তিবিশেষ তাকফির হবে। এটার জন্য ঐ ব্যক্তির গ্রহণযোগ্য ওজর, তার সার্বিক অবস্থা যাচাই করা জরুরি। তবে এমন ব্যক্তি যে কবিরা গোনাহে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নোট-২ঃ তবে পার্লামেন্ট বা বিচার বিভাগের সদস্যদের যারা কুরআন হাদিসের সুস্পষ্ট অকাট্য কোন বিধি বিধানকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করবে, যা কোন শরয়ী বিধানের উপর ঘৃণাভরে আপত্তি তুলবে, কটাক্ষ করবে, যেই বিধানগুলি শরীয়তের মৌলিক স্বঃতশিদ্ধ বিষয়ঃ এমন বিষয়ে আবার তাদের কোন ওজর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না, যাচাই করা হবে না । তারা মুরতাদ বলেই গন্য হবে। (২) অনুরুপভাবে যারা সুপ্রিম কোর্ট অথবা জর্জ কোর্ট তথা সর্বোচ্চ বিচারপতির আসনে থাকে, যারা নিজ পদবলে ক্ষমতাবলে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে কুফরি বিধানের উপর স্বেচ্ছায় রায় প্রদান করে, যারা শরীয়তের প্রতি বিদ্বেষ রেখে শাতিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে রায় প্রদান করে এবং নির্দোষ ভাইদেরকে ফাঁসির রায় প্রদান করে; যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে জেনেবুঝে; শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ি বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি তাগুত এবং মুরতাদ। এরা দলগতভাবে মুরতাদ। এদের প্রত্যেকের অবস্থা সর্বোচ্চ যাচাই ব্যতীত তাদেরকে মুসলিম বলা হবে না। (5) কোন বিচারক যদি অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে শরীয়ত বিরোধী রায় প্রদান করে, এবং সে শরীয়তের বাধ্যবাধকতাকে অপরিহার্য বলেই মেনে নিয়ে বাধ্য হয়ে অথবা প্রবৃত্তির অনুসারণে এমন রায় প্রদান করেঃ যা শরীয়াহর সঙ্গে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক এবং যে এমন কাজ করে থাকেঃ তাহলে তার এই কাজও কুফর, তবে এটি কুফরে আসগার তথা বড় কুফরের চাইতে একটু কম। কবীরা গোনাহ হবে, তবে কাফির হবে না। (6) তার এই চাকুরি জায়েজ নয়। এবং তার অধিকাংশ কাজ এমন হলে তার বেতন হালাল হবে না। কারণ গোনাহ, কুফুরি কাজ করে বিনিময় গ্রহণ জায়েজ নাই। (7) ভালোভাবে বুঝে নিন, শরীয়তের বিধি বিধানকে হক ও অবশ্যপালনীয় বলে স্বীকার করার পর পালনে ত্রুটি হলে তা গোনাহ, কুফর নয়। কারণ এই ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী মনে করে। পক্ষান্তরে বিধানের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্ন বা প্রতিবাদের অর্থ সরাসরি আনুগত্য-ত্যাগ, যা সাধারণ অপরাধ নয়, বিদ্রোহ। এটা মানুষকে দুনিয়ার বিধানে ‘মোবাহুদ দম’ (হত্যাযোগ্য) আর আখিরাতের বিধানে চিরজাহান্নামী সাব্যস্ত করে। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) তবে যারা এমনি গ্রাম্য পর্যায়ের আদলতের বিচারক বা সাধারণ কোর্টের বিচারক, যেখানে কোন জাতীয় আইন পাশ হয় না, যেখানে স্পষ্ট শরীয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন পাশ হয় না, তবে মাঝেমধ্যেই মিথ্যা মামলার রায়, অন্যায়ের পক্ষে ফায়সালা দেয়া ইত্যাদি কাজে যেসব বিচারক লিপ্ত থাকে; তাদের জন্য এমন চাকুরি নাজায়েজ। আর যদি কেউ এমন কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে থাকে, ঘুষ খেয়ে কাজ করে, হোক সে উকিল বা বিচারপতিঃ তাহলে তার চাকুরি অবৈধ এবং বেতনও বৈধ নয়। এটা হলো দ্বিতীয় পর্যায়ে তথা যা সত্তাগতভাবে হারাম। আর যদি কোন ব্যক্তি সৎ নিয়তে নিম্ন পর্যায়ের বিচারপতি/উকিল ইত্যাদি পদে যোগ দেয়, যার নিয়ত হলো মানুষকে হেল্প করা, অথবা যার কাছে এই মুহুর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিন্ন কোন পন্থা বাকি নাইঃ (কারণ উচ্চপদে বিচারপতি হলে তার পক্ষে কখনো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কুরআন সুন্নাহর অনুযায়ী রায় প্রদান করা সম্ভব নয়, তাই যেটা স্পষ্ট অসম্ভব, যেখানের সিস্টেমেই কুরআন সুন্নাহ নাইঃ সেখানে চাকুরিতে যোগদান করা যাবে না।) তাহলে এমন ব্যক্তি যদি এই পদে যোগ দেয় তাহলে সেটা তার জন্য জায়েজ হতে পারে। (9) এসব পদে থাকতে গেলে মিথ্যা বা স্বজনপ্রীতি করতেই হয়। সেরকম কিছু পাওয়া গেলে তা হারাম হবে। তবে বেতন হালাল হবে। কিন্তু এসব চাকুরি কখনো মাকরুহ থেকে খালি নয়। (10) এটা হলো তৃতীয় পর্যায়েরঃ যা কখনো কখনো নাজায়েজ হয়, কখনো কখনো মাকরুহ হয়। সর্বোপরি এটিও প্রকারান্তরে তাগুতের দল ভারী করার একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। (1) وقال ابن كثير رحمه الله : " فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء ، وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر ، فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه ؟! من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين " انتهى من "البداية والنهاية" (13/139) قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله : " والإنسان متى حلل الحرام المجمع عليه ، أو حرم الحلال المجمع عليه ، أو بدل الشرع المجمع عليه ، كان كافرا مرتدا باتفاق الفقهاء " انتهى من "مجموع الفتاوى" (3/267). (2) یعنی جو لوگ اللہ کے نازل کیے ہوئے احکام کو واجب نہیں سمجھتے، اور ان پر فیصلہ نہیں دیتے بلکہ ان کے خلاف فیصلہ کرتے ہے،او کافر و منکر جن کی سزا دایمی جہنم ہے ( معارف القران: 161/3) ﴿وَمَن لَمْ يَحْكم بِما أنْـزَلَ اللهُ﴾ مُسْتَهِينًا بِهِ ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ قالَ ابْنُ عَبّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما: مَن لَمْ يَحْكم جاحِدًا فَهو كافِرٌ، وإنْ لَمْ يَكُنْ جاحِدًا فَهو فاسِقٌ ظالِمٌ، وقالَ ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: هو عامٌّ في اليَهُودِ وغَيْرِهِمْ. ( تفسير النسفي: 449/1) قال القرطبي: قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿أَرْباباً مِنْ دُونِ اللَّهِ﴾ قَالَ أَهْلُ الْمَعَانِي: جَعَلُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ كالأرباب حيث أطاعوهم في كل شي، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿قالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذا جَعَلَهُ ناراً﴾(٢) [الكهف: ٩٦] أَيْ كَالنَّارِ. (3) قال السعدي في تفسيره: يشهد تعالى عباده من حالة المنافقين ويتعجب: {الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ} مؤمنون بما جاء به الرسول وبما قبله، ومع هذا {يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ} وهو كل من حكم بغير شرع الله فهو طاغوت. والحال أنهم {قد أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ} فكيف يجتمع هذا والإيمان؟ فإن الإيمان يقتضي الانقياد لشرع الله وتحكيمه في كل أمر من الأمور، فمَنْ زعم أنه مؤمن واختار حكم الطاغوت على حكم الله، فهو كاذب في ذلك. وهذا من إضلال الشيطان إياهم، ولهذا قال: {وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلالا بَعِيدًا} عن الحق (تفسير السعدي: 108) (4) قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قالَ عِكْرِمَةُ: قَوْلُهُ ﴿ومَن لَمْ يَحْكم بِما أنْزَلَ اللَّهُ﴾ إنَّما يَتَناوَلُ مَن أنْكَرَ بِقَلْبِهِ وجَحَدَ بِلِسانِهِ، أمّا مَن عَرَفَ بِقَلْبِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ وأقَرَّ بِلِسانِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ، إلّا أنَّهُ أتى بِما يُضادُّهُ فَهو حاكِمٌ بِما أنْزَلَ اللَّهُ تَعالى، ولَكِنَّهُ تارِكٌ لَهُ، فَلا يَلْزَمُ دُخُولُهُ تَحْتَ هَذِهِ الآيَةِ، وهَذا هو الجَوابُ الصَّحِيحُ واللَّهُ أعْلَمُ ( تفسير الرازي: 445/5) (5) وفي هذه الآية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر رسوله صلى الله عليه وسلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول والامتناع من التسليم ، وذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة وقتلهم وسبي ذراريهم ؛ لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه وسلم قضاءه وحكمه فليس من أهل الإيمان (احكام القرآن للجصاص: 181/3) ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ لِاسْتِهانَتِهِمْ بِهِ وتَمَرُّدِهِمْ بِأنْ حَكَمُوا بِغَيْرِهِ، ولِذَلِكَ وصَفَهم بِقَوْلِهِ الكافِرُونَ والظّالِمُونَ والفاسِقُونَ، فَكُفْرُهم لِإنْكارِهِ، وظُلْمُهم بِالحُكْمِ عَلى خِلافِهِ، وفِسْقُهم بِالخُرُوجِ عَنْهُ ( تفسير البيضاوي: ١٢٨/٢) ولما كان الأمر كذلك فإن كلام السلف ومنهم ابن القيم كلام لا غبار عليه، فإذا حكم الحاكم برشوة أو لقرابة، أو شفاعة أو ما أشبه ذلك فلا شك أن ذلك كفر دون كفر..وأما ما جد في حياة المسلمين - ولأول مرة في تاريخهم - وهو تنحية شريعة الله عن الحكم ورميها بالرجعية والتخلف وأنها لم تعد تواكب التقدم الحضاري، والعصر المتطور فهذه ردة جديدة في حياة المسلمين. إذ الأمر لم يقتصر على تلك الدعاوى التافهة، بل تعداه إلى إقصائها فعلاً عن واقع الحياة واستبدال الذي هو أدنى بها، فحل محلها القانون الفرنسي أو الإنجليزي أو الأمريكي أو الاشتراكية الإلحادية وما أشبه ذلك من تلك النظم الجاهلية الكافرة.(الولاء والبراء لسعيد القحطان: ص٦٨) (6)قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) (7)"(لا تصح الإجارة لعسب التيس) وهو نزوه على الإناث (و) لا (لأجل المعاصي مثل الغناء والنوح والملاهي). وفي الرد:مطلب في الاستئجار على المعاصي (قوله مثل الغناء) بالكسر والمد الصوت، وأما المقصور فهو اليسار صحاح (قوله والنوح) البكاء على الميت وتعديد محاسنه (قوله والملاهي) كالمزامير والطبل، وإذا كان الطبل لغير اللهو فلا بأس به كطبل الغزاة والعرس لما في الأجناس ... وفي المنتقى: امرأة نائحة أو صاحبة طبل أو زمر اكتسبت مالا ردته على أربابه إن علموا وإلا تتصدق به، وإن من غير شرط فهو لها: قال الإمام الأستاذ لا يطيب، والمعروف كالمشروط اهـ. قلت: وهذا مما يتعين الأخذ به في زماننا لعلمهم أنهم لا يذهبون إلا بأجر ألبتة." (فتاوي شامي: كتاب الاجارة، مطلب في الاستئجار علي المعاصي، ج:6، ص:55، ط:سعيد) (8)وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ) المائدة/2) مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ) أخرجه مسلم في صحيحه (4831). وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإثْمِ وَالْعُدْوَانِ ) يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات ، وهو البر ، وترك المنكرات ، وهو التقوى ، وينهاهم عن التناصر على الباطل ، والتعاون على المآثم ، والمحارم . "( تفسير ابن كثير :2 / 12-13) (9) فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10)وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15)
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ২য় পর্ব
১১ মে, ২০২৫
সেনাবাহিনী, র্যাব, সীমান্তরক্ষী, বিডিআর, নৌবাহিনী, পুলিশ সহজ কথায় সামরিক বাহিনী তথা ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরির বিধান নিয়ে লম্বা আলোচনা আছে। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি করা জায়েজ নয় বলেই মনে হয়। কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হয়। অবশ্য ঢালাওভাবে হারাম বা কুফর বিষয়টি এমন নয়। বরং জটিল এই মাসআলার ক্ষেত্রে টু দ্যা পয়েন্ট অথবা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বিস্তৃত মাসআলা কিতাবে পাওয়া যায় না। এরজন্য ডিফেন্স ফোর্সের প্রতিটি ক্যাটাগরি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে এর মাসআলা বের করতে হবে। যা বেশ দুরূহ ব্যাপার। আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টি নিয়ে সাধ্যমত বিস্তৃত অধ্যায়ন, ফিকির, গবেষণা এবং খোজ নেয়ার পরে মোটামোটি আকারে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি। মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্স বা উল্লেখিত সামরিক বাহিনীগুলোর চাকুরির পজিশন অবস্থা ভেদে তিন প্রকার বিধান আরোপিত হবে। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারেঃ তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয়। মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। (১) কেউ যদি তাগুতি এই সৈন্যবাহিনীতে এই নিয়তে যোগ দেয় যেঃ সে প্রচলিত সাংবিধানিক সমস্ত বিধি-নিষেধ প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হবে, কুফর প্রতিষ্ঠা, অথবা কাফিরদের সহযোগিতা করা, অথবা প্রয়োজনে নিরাপরাধ মুমিনের রক্ত ঝরানোর ক্ষেত্রে পিছপা হবে না অথবা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ লঙ্ঘণ করতে পিছপা হবে না, চাকুরি বাচানোর জন্য জেনে বুঝে এমন নিয়তে যারা যোগদান করবে, অথবা যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে, লেখালেখি করে, মাঠে ময়দানে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে গনতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজম রক্ষার জন্য এসব তাওহিদের ঝাণ্ডাবাহী লোকদের বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় গুলি চালায়; তারা মুরতাদ বলে গন্য হবে। তারা দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যাবে। (1) অনুরুপভাবে যারা জাতিসংঘের হয়ে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে বা মুসলিম জনগনের বিরুদ্ধে কুফফার রাষ্ট্রের পক্ষে অস্ত্রধারণ করে, এবং এই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার কারণে গর্ববোধ করেঃ এরাও মুরতাদ বলে বিবেচিত হবে, দ্বীন থেকে বের হয়ে গিয়েছে বলে গণ্য হবে। মুসলমানের বিপক্ষে কাফিরদের পক্ষ হয়ে লড়াই করা আক্রমণ করা স্পষ্ট কুফুরি। (2) যারা গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ রক্ষার জন্য নির্বিচারে মুসলিম ভাইদেরকে দ্বীনের প্রতি আক্রোশ হয়ে আটক করে, অথবা মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মজা পায়ঃ এমন প্রত্যেক ব্যক্তি মুরতাদ বলে গণ্য হবে। (3) বিশেষত যারা কর্নেল, মেজর, ডিআইজি, সেনাপ্রধাণ, কমান্ডার এবং এই প্রধান ব্যক্তিত্বতের অত্যান্ত নিকবর্তী সেনাপ্রধানরা এজাতীয় কাজের কমান্ড করে থাকে। এরা চিন্তা চেতনায় সম্পূর্ণ শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকে বেশিরভাগ। মোটকথা যারা উপরোক্ত চিন্তা-চেতনা লালন করে এবং শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকেঃ এই মাসআলা তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ ঈমান তখনই অস্তিত্ব লাভ করে যখন ইসলামের সকল অকাট্য বিধান ও বিশ্বাস মন থেকে কবুল করা হয়। পক্ষান্তরে এসবের কোনো একটিকেও অস্বীকার করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) উল্লেখিত পরিস্থিতিতে এইপ্রকার ডিফেন্স ফোর্সের বিধান হলোঃ এরা দলগত মুরতাদ বলে গন্য হবে। অর্থাৎ, পুরো জামাতের উপর মুরতাদের হুকুম আরোপিত হবে। হ্যা, ব্যক্তিগতভাবে কেউ আবশ্যিকভাবে বাধ্য থাকতে পারে বা শরয়ী গ্রহণযোগ্য কোন ওজর /কারণ থাকতে পারে। সেটা যাচাই করে তারপর সেই ব্যক্তির উপর বিধান আসবে। উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনিদৃষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নিদৃষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনিদৃষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। কিন্তু তার সেই কাজ যে কমপক্ষে কবীরা গোনাহ হবেঃ এব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। (4) এবং এই পর্যায়ে কাজ করা কারোর জন্যই জায়েজ নাই এবং তার বেতন হালাল হবে না। প্রসঙ্গত এখানে আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ এর একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ যারা শরীয়তের শুধু ‘শান্তির বিধান গ্রহণ করেন আর জিহাদের বিধানকে সন্ত্রাস বা উগ্রবাদিতা বলেন; উপদেশের কথাগুলো গ্রহণ করেন আর হদ-তাযীর ও কিসাসের বিধান বর্জনীয় মনে করেন; ইবাদতের বিষয়গুলো গ্রহণ করেন, আর লেনদেন ও হালাল-হারামের বিধান মানতে অসম্মত থাকেন; ব্যক্তিগত জীবনের বিধিবিধান গ্রহণ করেন, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র-পরিচালনার বিধি-বিধান (প্রশাসন, নির্বাহী ও বিচার-বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট) সম্পর্কে বিরূপ থাকেন; অথবা ইবাদত ও লেনদেনের বিধান মানেন, কিন্তু বেশ-ভূষা, আনন্দ-বিষাদ, পর্ব-উৎসব ও জীবন যাপনের আদব কায়েদার ইসলামী নির্দেশ ও নির্দেশনার প্রতি বিরূপ থাকেন বা মানাকে জরুরি মনে করেন না এরা সবাই ইসলামের কিছু অংশের অস্বীকার বা কিছু অংশের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্নের কারণে নিজের ঈমান হারিয়ে বসেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) (২) যারা ডিফেন্স ফোর্স তথা উল্লেখিত বাহিনীতে যোগদান এজন্য করে যেঃ এখানে গেলে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে, সুদ ঘুষের টাকা পাবে, যদিও অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের জন্য জুলুম করা লাগতে পারে, তাদের সব খারাবি জেনেও যে অতিরিক্ত টাকা পয়সা অর্জনের জন্য যাবে, এবং কখনো কখনো বাধ্য হয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে তাকে অস্ত্রধারণ করতে হয়; সে কবিরা গোনাহ করবে এবং তার এই চাকুরি অবৈধ বলে গন্য হবে এবং অন্যায়ভাবে যা গ্রহণ করবে তা হারাম উপার্জন বলে বিবেচিত হবে, (5) এবং যদি কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে থাকে নিজের চাকুরি বাচানোর জন্য ( সে দ্বীন ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ রেখে হত্যা করেছে বিষয়টি এমন নয়) তাহলে এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কেউ কেউ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। ( তবে সহীহ কথা হলোঃ এমন ব্যক্তি মুরতাদ হবে না (6) তবে তার এই কবীরা গোনাহের পরিণতি ভয়াবহ।) এমন সেক্টরে চাকুরি করা নাজায়েজ, তবে তার নায্য বেতন হালাল হবে। (7) (৩) যেই ব্যক্তি সেক্যুলার রাষ্ট্রে উপরোক্ত কোন উদ্দেশ্যে নয়, বরং দেশ এবং জনগনের সেবা করার মানসেই ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি নিতে চায় অথবা বাধ্য হয়েই সে চাকুরিতে জয়েন করছে অন্য উপায় না থাকার কারণে তাহলে এমন ব্যক্তি ভ্রষ্টতায় লিপ্ত আছে। সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির জন্য সৈন্যবাহিনীতে চাকুরি করা মাকরুহ। হারামের কাছাকাছি, তবে ইনকাম হালাল হবে। অতিসত্তর তাকে দ্রুত এই চাকুরি ছেড়ে ভিন্ন আরেকটি চাকুরিকে শিফট হতে হবে। সন্দেহমুক্ত কোন চাকুরি তাকে খুজতে হবে। ( তবে যদি সে এমন পোস্টে চাকুরি করেঃ যেখানে সরকারি বড় বড় কাজের কোন সম্পৃক্ততা নাই, এবং জনগনের হক্ব নস্ট করারও আশঙ্কা নাই; বরং জনগনের সেবার জন্য নিম্ন পদস্থ কোন সেক্টর যেমনতঃ হাবিলদার, দারোয়ান, কনস্টেবল; তাহলে এমন ব্যক্তির চাকুরি করার সুযোগ আছে। (9) কিন্তু তার উচিত ভিন্ন কোন চাকুরিতে জয়েন করা। তাছাড়া ডিফেন্স ফোর্সের কিছু বিধি-নিষেধ ক্বানুন রয়েছে। যেমন এসব ফোর্সের বেশিরভাগ জায়গায় দাড়ি কেটে ফেলতে বলা হয়। দাড়ি না কাটলে প্রমোশন হয় না। কোথাও দাড়িকাটা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে, বেপর্দা ফ্রি মিক্সিং তো আছেই। (10) জাতীয়তাবাদী পতাকাকে সম্মান জানাতে হয়। ইত্যাদি এসব কিছু যদি বাধ্যতামুলক হয়ে থাকে; তাহলে চাকুরির জন্য এইসব কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। (11) দ্রুত এমন চাকুরি ছাড়া জরুরী। তবে শর্তসাপেক্ষে বেতন হালাল হবে, যা ২ এবং ৩ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। (1) عن عبد الله بن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله ، وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث : النفس بالنفس ، والثيب الزاني ، والتارك لدينه المفارق للجماعة. روى البخاري: 6484 ومسلم 1676 وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قال ابنُ جريرٍ: (يقولُ: ومن يتَّخِذْهم منكم بِطانةً من دونِ المؤمنينَ، ويؤثِرِ المقامَ معهم على الهِجرةِ إلى رَسولِ اللهِ ودارِ الإسلامِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ يقولُ: فالذين يَفعَلون ذلك منكم هم الذين خالفوا أمرَ اللهِ، فوَضَعوا الوَلايةَ في غيرِ مَوضِعِها، وعَصَوا اللهَ في أمْرِه. وقيل: إنَّ ذلك نزل نهيًا من اللهِ المؤمنينَ عن موالاةِ أقرِبائِهم الذين لم يُهاجِروا من أرضِ الشِّركِ إلى دارِ الإسلامِ: تفسير الطبري: 383/11) وقال السَّعديُّ: (وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ؛ لأنَّهم تجَرَّؤوا على معاصي اللهِ، واتَّخَذوا أعداءَ اللهِ أولياءَ، وأصلُ الولايةِ: المحبَّةُ والنُّصرةُ، وذلك أنَّ اتخاذَهم أولياءَ موجِبٌ لتقديمِ طاعتِهم على طاعةِ اللهِ، ومحَبَّتَهم على محبَّةِ اللهِ ورَسولِه) (2) فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوا أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاء فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاء حَتَّىَ يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ… [النساء: 88-89] . قال السَّعديُّ: (المرادُ بالمُنافِقين المذكورينَ في هذه الآياتِ: المُنافِقون المظهِرون إسلامَهم، ولم يهاجِروا مع كُفْرِهم، وكان قد وقع بين الصَّحابةِ رِضوانُ اللهِ عليهم فيهم اشتباهٌ، فبعضُهم تحرَّج عن قتالِهم، وقَطَع موالاتَهم بسبَبِ ما أظهَروه من الإيمانِ، وبعضُهم عَلِم أحوالَهم بقرائِنِ أفعالِهم، فحَكَم بكُفْرِهم، فأخبرهم اللهُ تعالى أنَّه لا ينبغي لكم أن تشتَبِهوا فيهم ولا تشُكُّوا، بل أمْرُهم واضِحٌ غيرُ مُشكِلٍ، إنَّهم مُنافِقون قد تكرَّر كُفْرُهم، وودُّوا مع ذلك كُفْرَكم، وأن تكونوا مِثْلَهم، فإذا تحقَّقْتُم ذلك منهم فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاءَ، وهذا يستلزِمُ عَدَمَ محبَّتِهم؛ لأنَّ الوَلايةَ فرعُ المحبَّةِ.( تفسير السعدي: ص192) (3) قَولُ الله تعالى: وَمَن يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ [المائدة: 51] . قال ابنُ جريرٍ: (من تولَّاهم ونصَرَهم على المؤمنين فهو من أهلِ دينِهم ومِلَّتِهم؛ فإنَّه لا يتولَّى متولٍّ أحدًا إلَّا وهو به وبدينِه وما هو عليه راضٍ، وإذا رَضِيَه ورَضِيَ دينَه فقد عادى ما خالفه وسَخِطَه، وصار حُكمُه حُكمَه ( تفسير ابن جرير: 508/8) (4) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) قال الطبري – رحمه الله - :عن ابن عباس قال : فأخبر الله سبحانه أنه من كفر من بعد إيمانه : فعليه غضب من الله وله عذاب عظيم ، فأما من أكره فتكلم به لسانه وخالفه قلبه بالإيمان لينجو بذلك من عدوّه : فلا حرج عليه ؛ لأن الله سبحانه إنما يأخذ العباد بما عقدت عليه قلوبهم . " تفسير الطبري " ( 17 / 305 ) (5) والاستئجار على المعاصي باطل فإن بعقد الإجارة يستحق تسليم المعقود عليه شرعا ولا يجوز أن يستحق على المرء فعل به يكون عاصيا شرعا." (المبسوط: کتاب الإجارات، باب الإجارۃ الفاسدۃ، ج:16، ص38، ط:دار المعرفة) (6)أَخَذَ الْمُشْرِكُونَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ فَلَمْ يَتْرُكُوهُ حَتَّى سَبَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَذَكَرَ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ، ثُمَّ تَرَكُوهُ . فَلَمَّا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ : مَا وَرَاءَكَ؟ . قَالَ : شَرٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؛ مَا تُرِكْتُ حَتَّى نِلْتُ مِنْكَ ، وَذَكَرْتُ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ؟! قَالَ : كَيْفَ تَجِدُ قَلْبَكَ ؟ . قَالَ : مُطْمَئِنًا بِالإِيمَانِ . قَالَ : إِنْ عَادُوا فَعُدْ . ٍرواه الحاكم في " المستدرك " ( 2 / 389 ) قال ابن حزم رحمه الله : " اتَّفقُوا على أَن الْمُكْره على الْكفْر وَقَلبه مطمئن بالايمان انه لَا يلْزمه شَيْء من الْكفْر عِنْد الله تَعَالَى .. " انتهى . "مراتب الإجماع" (61) . وينظر : "الإقناع في مسائل الأجماع" لابن القطان (2/272) (7) الأجرة انما تكون في مقابلة العمل( شامي: كتاب النكاح: 307/4،زكريا) او خياطا امره ان يتخذ له ثوبا على زي الفساق يكره له ان يفعله لانه سبب التشبه بالمجوس والفسقة ( شامي: كتاب الحظر والاباحة:562/9،ط.زكريا) وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15) لو اجره دابة لينقل عليها الخمر او اجره نفسه ليرعى له الخنازير يطيب له الاجر وعنده وعندهما يكره( شامي: كتاب الحظر والاباحة: 562/9) ( فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) قال أبو بكرٍ الجَصَّاصُ: (هذا أصلٌ في جوازِ إظهارِ كَلِمةِ الكُفرِ في حالِ الإكراهِ ( احكام القرآن: 192/3) (9) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وان استاجره لينحت له طنبورا او بربطا ففعل طاب له الاجر الا انه ياثم به.( هندية: 450/4،زكريا) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) (11)قُلۡ أَطِیعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا یُحِبُّ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ( سورة ال عمران: 32)
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ১ম পর্ব
১১ মে, ২০২৫
আমাদের কাছে প্রায়ই একটি প্রশ্ন এসে থাকে যেঃ সরকারি চাকরির বিধান কি? অর্থাৎ সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করা যেমন ওকালতি করা, ব্যারিস্টার হওয়া, পুলিশ বিভাগের চাকরি করা, সামরিক বিভাগের চাকরি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের চাকরি করা। মোটকথা কোন ব্যক্তি যদি সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করে তাহলে ওই চাকরি করা তার জন্য জায়েজ হবে নাকি জায়েজ হবে না! এবং তার বেতন হালাল নাকি হারাম? আল্লাহ চাইলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এই আর্টিকেল পড়ার আগে আমরা একটা মূলনীতি মাথায় রাখি যে, আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এমন রাষ্ট্রের সরকারি পদে চাকরি করা নিয়েঃ যে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র নয় তথা রাষ্ট্রপ্রধান বাস্তবিক পক্ষে মুসলমান নয় এবং সেই দেশ ইসলামী আইন অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না। সেই দেশের সরকারি চাকরি নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আলোচনা করব নতুবা ইসলামের রাষ্ট্রে সরকারি পদে চাকরি করতে কোন বাধা নেই। ভূমিকাঃ এজন্য সবার আগে আমাদেরকে জানতে হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের রাষ্ট্র কোনটি এবং কুফরি রাষ্ট্র কোনটি! মুলত কোন দেশ দারুল ইসলাম নাকি দারুল হারব তথা দারুল কুফর হওয়া বা না হওয়ার মৌলিক প্রধান মাপকাঠি হলোঃ ঐ দেশ বা ভূখণ্ডে বাস্তবায়িত প্রচলিত আইন এবং সংবিধান। তাই কোন দেশ যদি ইসলামী নীতিমালা এবং শরয়ী আইন অনুযায়ী চলে, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম তথা ইসলামি রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী অথবা অধিকাংশ অমুসলিম অল্পকিছু মুসলিম। জনসংখ্যার কমবেশি এটা কোন প্রভাব ফেলবে না। সেটি ইসলামি রাষ্ট্র বলেই গণ্য হবে। আর যদি কুফুরি আইন এবং সংবিধানে দেশ পরিচালিত হয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো যদি কুফুরি নীতিমালার আলোকে গৃহীত হয় তাহলে সেটি দারুল হারব তথা দারুল কুফর; কাফের রাষ্ট্র! যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী হোক, এসবে কোন প্রভাব ফেলবে না। এটিই হানাফি মাজহাবসহ বাকি ইমামদের ফতোয়া। যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ আরো অতিরিক্ত দুটি শর্ত করেছেন। কিন্তু ফতোয়া সাহেবাইনের উপর। ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ حُكْمُ الدَّارِ إِنَّمَا يَتَعَلَّقُ بِالظُّهُوْرِ وَالْغَلَبَةِ، وَإِجْرَاءِ حُكْمِ الدِّيْنِ بِهَا، وَالدَّلِيْلُ عَلَى صِحَّةِ ذَلِكَ: أَنَّا مَتَى غَلَبْنَا عَلَى دَارِ الْحَرْبِ، وَأَجْرَيْنَا أَحْكَامَنَا فِيْهَا: صَارَتْ دَارَ الْإِسْلَامِ، سَوَاءٌ كَانَتْ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْإِسْلَامِ أَوْ لَمْ تَكُنْ، فَكَذَلِكَ الْبَلَدُ مِنْ دَارْ الْإِسْلَامْ، إِذَا غَلَبَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْكُفْرِ، وَجَرَى فِيْهِ حُكْمُهُمْ: وَوَجَبَ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْحَرْبِ. وَلَا مَعْنَى لِاِعْتِبَارِ بَقَاءِ ذِمِّيٍّ أَوْ مُسْلِمٍ آَمِنًا عَلَى نَفْسِهِ؛ لِأَنَّ الْمُسْلِمَ قَدْ يَأْمَنُ فِيْ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يَسْلِبُهُ ذَلِكَ حُكْمَ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يُوْجِبُ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْإِسْلَامِ. ‘ কোন দেশের হুকুম বা বিধান এটি বিজয়, কর্তৃত্ব ও কোনো ধর্মের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সাথে সম্পর্কিত। এ দাবির পক্ষে দলিল হলো, আমরা যখন “দারুল হারব” এর ওপর বিজয়ী হই এবং তথায় আমাদের শাসনব্যবস্থা চালু করি, তখন সেটা “দারুল ইসলাম” হয়ে যায়; চাই সে রাষ্ট্রটি কোনো “দারুল ইসলাম” এর সংলগ্ন হোক বা না হোক। তাহলে অনুরূপ “দারুল ইসলাম”-এর কোনো শহরের ওপর যখন কাফিররা বিজয়ী হবে এবং তথায় তাদের কুফরি শাসনব্যবস্থা চালু হবে, তাহলে সেটা অবশ্যই “দারুল হারব”-এ পরিণত হয়ে যাবে। মুসলিম ও জিম্মিদের পূর্বের নিরাপত্তাচুক্তিতে তাদের নিরাপদ থাকাকে বিবেচনা করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। কেননা, মুসলমানও তো কখনও কখনও “দারুল হারব”-এ নিরাপদ থাকে; অথচ এর কারণে এটা রাষ্ট্রকে “দারুল হারব” হওয়া থেকে বের করে দেয় না এবং “দারুল ইসলাম”-এ রূপান্তরিত হয়ে যাওয়াকে আবশ্যক করে না।’ (শারহু মুখতাসারিত তাহাবি : ৭/২১৬-২১৭, প্রকাশনী : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যা, বৈরুত) ২. ইমাম সারাখসি রহ. স্বীয় ‘মাবসুত’-এ সাহিবাইনের-এর পক্ষ থেকে দলিল দিয়ে বলেনঃ الْبُقْعَة إنَّمَا تُنْسَبُ إلَيْنَا أَوْ إلَيْهِمْ بِاعْتِبَارِ الْقُوَّةِ وَالْغَلَبَةِ، فَكُلُّ مَوْضِعٍ ظَهَرَ فِيهِ حُكْمُ الشِّرْكِ فَالْقُوَّةُ فِي ذَلِكَ الْمَوْضِعِ لِلْمُشْرِكِينَ فَكَانَتْ دَارَ حَرْبٍ، وَكُلُّ مَوْضِعٍ كَانَ الظَّاهِرُ فِيهِ حُكْمُ الْإِسْلَامِ فَالْقُوَّةُ فِيهِ لِلْمُسْلِمِينَ. ‘স্থান আমাদের (মুসলমানদের) সাথে বা তাদের (কাফিরদের) সাথে সম্পৃক্ত হয় শক্তি ও বিজয়ের ভিত্তিতে। অতএব, যে জায়গায় শিরকের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুশরিকদের শক্তি বিজয়ী; বিধায় সেটা হবে “দারুল হারব”। আর যে জায়গায় ইসলামের সংবিধান বিজয়ী থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুসলমানদের শক্তি বিজয়ী।’ (আল-মাবসুত, সারাখসি : ১০/১১৪, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত) অনেকের সন্দেহ হতে পারে যে, তাহলে অনেক দেশে দেখা যায় অর্থাৎ অনেক রাষ্ট্রে দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের সংবিধান কুফুরী নীতিমালা ( যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র) অনুযায়ী পরিচালিত হয় সেখানে মুসলমানরা ঈদের নামাজ জুমার নামাজ সহ তারা তাদের দৈনন্দিন আমলী জিন্দেগী পালন করতে পারে; তাহলে সেটা কিভাবে কাফের রাষ্ট্র হতে পারে সেটা তো ইসলামের রাষ্ট্র হওয়ার কথা। একথা বুঝতে হবে যে ব্যক্তিগত সামান্য কিছু ইবাদত পালন করার সুযোগ পাওয়ার দ্বারাই কোন দেশ দারুল ইসলাম হয়ে যায় না। ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যায় না। বরং দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এবং নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণ ইসলামী হওয়াটা আবশ্যক। হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহিমাহুল্লাহ তিনি বলেনঃ ইসলামী রাষ্ট্র এবং কুফুরি রাষ্ট্রের মাসআলা যখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এখন নিজেই হিন্দুস্তানের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন! এখানে খ্রিস্টান কাফেরদের আইন-কানুন কিভাবে শক্তি ও কর্তৃত্বের সঙ্গে জারি আছে! একজন সাধারন ডেপুটি কমিশনারও যদি আদেশ করে যে মসজিদে জামাত করোনা, তাহলে ধনী গরিব কেউই আদায় করে দেখাতে সক্ষম নয়। আর এই যে জুমা, দুই ঈদ ও কিছু ফিকহি মাসআলা অনুযায়ী আমল চলছে তা শুধুমাত্র তাদের আইনের কারণে। তারা প্রজাদের জন্য ফরমান জারি করেছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী চলবে, সরকার তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। (তালিফাতে রশিদিয়া: পৃষ্ঠাঃ ৬৬৭ ) এজন্য সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন যেঃ হিন্দুস্তান দারুল হারব এবং তা ততদিন পর্যন্ত দারুল হারব হিসেবে পরিগণিত হবে, যতদিন তাতে কুফুরের কর্তৃত্ব বিদ্যমান থাকবে। আর দারুল হারবের যত ধরনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং যত শর্তের কথা বলা হয়ঃ সবগুলোই এই হিন্দুস্থানে বিদ্যমান। ( মাকতুবাতে শাইখুল ইসলামঃ ২/১১৫) এইজন্য শুধু ৭০% অথবা ৯০% মুসলিম দেখলেই এটা ভেবে বসার অবকাশ নেই যে সেটি ইসলামী রাষ্ট্র! রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করলেও দেশ যদি কুফুরি সংবিধান অনুযায়ী চলে তাহলে মাজহাবের ইমামগনের মতে সেটি দারুল হারব বলেই বিবেচিত হবে। আর আমাদের আলোচ্য মাসআলাও দারুল হারবকে কেন্দ্র করে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই দারুল ইসলামে সরকারি চাকুরি করা জায়েজ। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রে সরকারি পদ কোন অবৈধ কাজের জন্য নয়। নোটঃ বারবার পড়ুন। আয়ত্ব করুন। মাসআলা বুঝার জন্য এটি খুবই জরুরী।
বিস্তারিত পড়ুনসাম্প্রতিক প্রবন্ধ
Hm Sulayman - ১৫ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ মে, ২০২৫
Hm Sulayman - ৯ মে, ২০২৫
সকল প্রসঙ্গ
২৭তম রজনী
অনলাইন কোর্স
অলিম্পিক
আংটি
আধুনিক মাসআলা
আধুনিক মাসাআলা
উম্মুল মু'মিনিন
ওকালতি
কাফফারা
কাযা
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস
ক্রিকেট
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্র্যাকড
খেলাধুলা
খেলাধুলা হতে উপার্জন
জর্দা
ডাক্তারি বিদ্যা
ডিফেন্স ফোর্স
তামাক
তারাবীহ
তালাক
দোআ
দোয়া
নবীজি
নবুয়তের সিলমোহর
নেশা
নৌবাহিনী
পাইরেটেড
পার্লামেন্ট সদস্য
পুলিশ
পেইড কোর্স
ফিদিয়া
ফুটবল
বিচারপতি
বিটকয়েন
বিড়ি
বিডিআর
ব্যবসায়
ব্যাডমিন্টন
ব্যারিস্টার
মদ
মাকরুহ
মুনাজাত
মেডিকেল
যাকাত
যাকাত-ফিতরা
রাস্তায় পাওয়া জিনিস
রোজা
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার মাসআলা
রোজার মাসাআলা
রোযা ভঙ্গের কারণ
র্যাব
লাইলাতুল ক্বদর
লাইলাতুল বারাআত
শবে ক্বদর
শবে বরাত
শিক্ষক
সফটওয়্যার
সংবিধান
সরকারি চাকরি
সহশিক্ষা
সামরিক বাহিনী
সিগারেট
সেনাবাহিনী
স্ত্রী
© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত